ঢাকা , রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ , ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ট্রেনের টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণা নানা হিসাব-নিকাশে অন্তর্বর্তী সরকার দেড় মাসেও সন্ধান মেলেনি সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ১৮ জেলের জীবনযাত্রায় ভয়ানক চাপ নদী বাঁচলে পরিবেশও টিকে থাকবে -পরিবেশ উপদেষ্টা সচিবালয়ের ভবনগুলোতে পরিত্যক্ত মালামাল অপসারণের অনুরোধ চলন্ত অটোরিকশার পেছনে ঝুলে থাকা ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল গ্রেফতার বাবাকে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে চড় খতিয়ে দেখছে পুলিশ নোয়াখালীতে ট্রলারবোঝাই ইউরিয়া সার জব্দ ঘরে ৩ বস্তা টাকা জমানো সেই ভিখারির মৃত্যু ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়’ মায়ের দাফন নিয়ে দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ১ তিন শতাধিক পুলিশ সদস্যকে ব্রেস্ট ক্যান্সার বিষয়ে প্রশিক্ষণ সরকারে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিরা থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়-আমীর খসরু বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষা খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে-তারেক রহমান গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি-শিরীন পারভিন বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরছে প্রতারণার শিকার কর্মীরা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৫ চেয়ারম্যানের ছেলেসহ হ্যাকার চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহে খনন শুরু

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরছে প্রতারণার শিকার কর্মীরা

  • আপলোড সময় : ২৫-১০-২০২৫ ০৯:৩৭:৪৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৫-১০-২০২৫ ০৯:৩৭:৪৪ অপরাহ্ন
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরছে প্রতারণার শিকার কর্মীরা
* দালাল ও অনিয়ন্ত্রিত রিক্রুটিং এজেন্সির ফাঁদে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন শেষে কর্মীরা দেশে ফিরছেন হতাশা নিয়ে।
* সম্প্রতি কিরগিজস্তান, দুবাই, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত বাংলাদেশি কর্মী প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন।

ভালো বেতনের চাকরির আশায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে শত শত মানুষ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে খালি হাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। দালাল ও অনিয়ন্ত্রিত রিক্রুটিং এজেন্সির ফাঁদে পড়ে তারা শুধু অর্থই হারাচ্ছেন না, বরং মানবেতর জীবনযাপন শেষে দেশে ফিরছেন হতাশা নিয়ে। সামপ্রতিক সময়ে কিরগিজস্তান, দুবাই, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত বাংলাদেশি কর্মী প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন।
জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তান থেকে বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ১৮০ জন বাংলাদেশি। গার্মেন্টস ও নির্মাণ খাতে ভালো বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে তাদের সেখানে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে তারা কাজ পাননি, বেতনও পাননি। অনেকেই নথিপত্রহীন হয়ে পড়েন, কেউ কেউ নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি অনেক পরিবারকে মুক্তিপণ দিতেও বাধ্য করা হয়েছে। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ও দালালদের প্রলোভনে পড়ে মানুষগুলো বিদেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হন। তিনি বলেন, বিদেশে বেশি বেতনের কাজের লোভ দেখানো হলেও বাস্তবে গিয়ে তারা কাজ পাননি, বেতন পাননি। অনেকেই নথিপত্রহীন হয়ে পড়েছেন, আবার অনেকের পরিবারকে মুক্তিপণ দিতে হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দালালরা তাদের ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে তারা আটকা পড়েন মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে। কাজ না পেয়ে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন, আবার কেউ কেউ জিম্মি হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেককে সীমান্তবর্তী এলাকায় আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে। কেউ কেউ আবার অবৈধভাবে অন্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদিকে, ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, গত আট বছরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে ফেরত আসা ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪০ জন প্রবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ বিদেশে যান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই দালাল ও অনিয়ন্ত্রিত এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদেশগামী কর্মীদের সুরক্ষায় নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নীতিমালা নয়, বাস্তবায়ন ও নজরদারি জোরদার না হলে প্রতারণা বন্ধ হবে না। দালালচক্র ও অনিয়ন্ত্রিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতার। ফেরত আসা কর্মীরা জানান, মাসে ৬০০ ডলার বেতন দেওয়া হবে বলা হয়েছিল কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায় কোনো কাজই নেই। দিন কাটাতে হয় না খেয়ে। পরে পরিবার থেকে টাকা পাঠিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে। আবার কারও কারও পাসপোর্টও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কাজ না দিয়েই আটকে রাখা হয়েছিল। পরে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেতে হয়। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদেশগামী কর্মীদের প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে হলে কঠোর আইন প্রয়োগ, দালালচক্রের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান এবং ভুক্তভোগীদের জন্য দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশে যাওয়ার আগে কর্মীদের সঠিক তথ্য ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও জোর দিচ্ছেন তারা। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে কর্মসংস্থানের চাহিদা থাকলেও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। তারা মনে করেন, বিদেশগামী কর্মীদের জন্য সরকারি পর্যায়ে তথ্যকেন্দ্র ও হেল্পলাইন আরও শক্তিশালী করা জরুরি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নতুন করে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এতে দালালদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশে কর্মীদের সুরক্ষায় গন্তব্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে কর্মসংস্থানের আশায় দালাল ও এজেন্সির ফাঁদে পড়ে যে হারে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন বাংলাদেশি কর্মীরা; প্রতারণা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ প্রবণতা আরও বাড়বে এবং দেশের শ্রমবাজার ও প্রবাসী আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স